এখন সবার ওপরে শেখ জামাল

সলোমন-রাফায়েলের গোল মিছিলে ভাসছে শেখ জামাল ধানমণ্ডি। কালও দুই বিদেশি গোল-উৎসব করেছেন, সুবাদে এত দিন শিরোপা লড়াইয়ে থাকা শেখ জামাল ধানমণ্ডি কাল উঠে গেছে শীর্ষস্থানে। ব্রাদার্সকে ৩-২ গোলে হারিয়ে তারা ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠেছে এককভাবে। সুবাদে শিরোপার সুরভিও তাদের নাকে লাগতে শুরু করেছে। দুই আবাহনী ১ পয়েন্ট করে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় স্থানে।
৫ মিনিটে শেখ জামালের লিড যেন একতরফা ম্যাচের ইঙ্গিত দিয়েছিল। সেটা হয়নি। ব্রাদার্স ইউনিয়ন মরিয়া হয়ে আক্রমণ করে গোলের জবাব দিয়েছে পাল্টা গোলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সলোমন-রাফায়েলের গোল মিছিলের সঙ্গে পেরে ওঠেনি তারা। কালও সলোমন কিংয়ের জোড়া গোলের সঙ্গে রাফায়েলের আছে এক গোল। দারুণ খুশি শেখ জামালের কোচ মাহবুব হোসেন রক্সি, ‘শেষ কয়টি ম্যাচ বাকি আছে। আমাদের লক্ষ্য হলো, এক-একটি ম্যাচ জিতে এই লিড ধরে রাখা শেষ পর্যন্ত। এভাবে খেলতে পারলে অবশ্যই আমরা চ্যাম্পিয়ন হব।’
চট্টগ্রাম আবাহনী যখন নিজের সেরাটা হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলে পিছিয়ে পড়ছে, তখন শেখ জামাল খেলছে দুর্দান্ত ফুটবল। দারুণ ফর্মে তাদের খেলোয়াড়রা। আরামবাগের জালে ৬ গোল দেওয়ার পর তারা পরের ম্যাচে মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়েছে ৩-১ গোলে। সেই ধারায় গতকালও শুরু করেছিল ৫ মিনিটে লিড নিয়ে। ডান দিক থেকে জাভেদ খানের ক্রসে গাম্বিয়ান সলোমন কিংয়ের হেড ব্রাদার্সের জালে পৌঁছে যায়। লিড নিয়ে তারা চাপ ধরে রাখে প্রতিপক্ষের ওপর। বেশ কয়েকটি সুযোগ নষ্টের পর ৪৪ মিনিটে আবার ব্যবধান বাড়ান ওই গাম্বিয়ান। আফসারের লং বলটি আয়ত্তে নিয়ে তিনি চমৎকার ফিনিশ করেন। জোড়া গোলের সুবাদে ১২ গোল নিয়ে সলোমন হয়ে গেলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরও ব্রাদার্স কিন্তু দমেনি। তাদের এক কাউন্টারে সুইট ব্রাদার্সের কঙ্গোর ফরোয়ার্ড জুনাপিওকে ফাউল করে পেনাল্টি উপহার দেয় ব্রাদার্সকে। পেনাল্টি থেকে গোল করেন জুনাপিও আর ২-১ গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় ব্রাদার্স। এই পেনাল্টি মেনে নিতে পারছেন না শেখ জামাল কোচ মাহবুব হোসেন রক্সি, ‘ওটা কোনোভাবে পেনাল্টি হয় না। আমার খেলোয়াড় বল ক্লিয়ার করেছে, সেটা আয়ত্তে নিতে না পেরে জুনাপিও পড়ে গেছে।’
ফেরার পর শেখ জামাল লিড ধরে রাখতে একটু ডিফেন্সে মনোযোগী হলে ব্রাদার্স আক্রমণের চাপ বজায় রাখে। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। ৭৮ মিনিটে শেখ জামালের দুই বিদেশি ফরোয়ার্ড ওয়ান-টু খেললে এলোমেলো হয়ে যায় ব্রাদার্সের ডিফেন্স। সালোমনের বাড়ানো বলটি রাফায়েল জালে পৌঁছে দিয়ে ৩-১ গোলের লিড নেন। তাতে এই নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ১৪ গোল নিয়ে এখন সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে। ব্রাদার্সের ম্যাচে ফেরা আরো কঠিন হয়ে গেল। তার পরও তারা হাল ছাড়েনি। মধ্যবর্তী দলবদলে শেখ জামাল ছেড়ে যাওয়া যোশেফ নূরের এক দুর্দান্ত ফ্রি-কিক বুমেরাং হয়ে ফিরেছে তার পুরনো দলে। তাতে গোল হয়নি, তবে শটটি এত মাপা হয়েছে, বিশাল তাতে মাথা ছুঁইয়ে ব্যবধান ৩-২ করে ফেলেন। পরের দশ মিনিট চাপেই কাটিয়ে শেখ জামাল টানা তৃতীয় ম্যাচ জিতে পৌঁছে যায় পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। তিন ম্যাচ আগে রহমতগঞ্জের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করার পর শেখ জামালের দুই ফরোয়ার্ডের পায়ে যেন গোলের ফুল ফুটেছে। রাফায়েলের সর্বোচ্চ ১৪ গোলের পর দ্বিতীয় স্থানে আছেন ২১ গোল নিয়ে সলোমন কিং। তাঁদের নতুন কোচ মাহবুব হোসেন রক্সি এটাকেই প্লাস পয়েন্ট মানছেন, ‘আমাদের গোল নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। দুই বিদেশি দুর্দান্ত খেলে গোল করছে। আমাদের ডিফেন্স একটু সাপোর্ট করলে জয়ের ধারা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারব। এই ধারাটা ধরে রাখতে হবে।’
দিনের অন্য ম্যাচে ফরাশগঞ্জ ৩-০ গোলে রহমতগঞ্জকে হারিয়েছে। এই ম্যাচে রহমতগঞ্জ ফেভারিট থাকলেও ৮ মিনিটে মিনহাজুল আবেদীনের গোলে এগিয়ে ফরাশগঞ্জ। পরে চিনেডো ম্যাথু ও মান্না আরো দুই গোল করে ফরাশগঞ্জের জয় নিশ্চিত করেছেন। ফরাশগঞ্জ এককভাবে আর তলানিতে নয়, ১৩ পয়েন্ট পাওয়া রহমতগঞ্জকে সঙ্গে নিয়ে যুগ্মভাবে সবার নিচে।