কুড়িলে বসুন্ধরা অস্থায়ী কোভিড হাসপাতালের যাত্রা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উদ্বোধন হলো দেশের বৃহত্তম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম করোনা হাসপাতাল ‘বসুন্ধরা অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল’। রবিবার দুপুরে রাজধানীর কুড়িলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় এই হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি। এখানে অত্যাধুনিক মোট ২০১৩টি আইসোলেটেড বেড রয়েছে, যার ৭১টির সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার যুক্ত করা রয়েছে। প্রায় ৪০০টি পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। আইসিইউ ব্যবস্থাও রয়েছে বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. সাজ্জাদ হায়দার-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ও ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান, ডেইলি সানের সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক এবং নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নঈম নিজাম, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক জুয়েল মাজহার, কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামাল প্রমুখ। বসুন্ধরা করোনা ডেডিকেটেড অস্থায়ী হাসপাতালটিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোভিড হাসপাতাল উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মাত্র ২০ দিনের মধ্যে এই হাসপাতালটি (বসুন্ধরা অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল) সরকার প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছে। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল। এখানে অত্যাধুনিক মোট ২০১৩টি আইসোলেটেড শয্যা রয়েছে, যার ৭১টির সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার যুক্ত করা রয়েছে। এছাড়া এখানে আরও প্রায় ৪০০টি পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। আইসিইউ ব্যবস্থাসহ এই হাসপাতালটি উন্নত দেশের কোভিড অস্থায়ী হাসপাতালের থেকে কোন অংশেই পিছিয়ে নেই। তিনি আরও বলেন, এই হাসপাতালের জন্য ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত লোকবলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথমে ৫শ’ রোগীর জন্য, দ্বিতীয় ধাপে আরও ৫শ’ রোগীর জন্য এবং সর্বশেষে বাকি রোগীদের জন্য এই তিন ধাপে এখানে লোকবল পদায়ন করা হবে।
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশের চিকিৎসা খাতকে আরও শক্তিশালী করতে শীঘ্রই পাঁচ হাজার মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মাত্র ১০ দিনের মধ্যে দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চিকিৎসা খাতকে আরও শক্তিশালী করতে নতুন অন্তত পাঁচ হাজার মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে। খুব শীঘ্রই এই টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ দেয়া হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, করোনা মোকাবেলায় দেশে এখন প্লাজমা থেরাপি চিকিৎসা চালুর কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত ওষুধ রেমডেসিভির এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে এবং সরকারের নিকট এই ওষুধ মজুদ করা হচ্ছে। এছাড়া নন-কোভিড হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের বাধ্যতামূলক চিকিৎসার জন্য সকল সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মানুষ যেন করোনার লক্ষণ থাকলে তার তথ্য গোপন না করেন সে ব্যাপারেও সকলের নিকট অনুরোধ থাকবে।
লকডাউন পরিস্থিতি শিথিল করা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রথম থেকেই একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় কাজ করছে। যখন লকডাউন জরুরী ছিল তখনই লকডাউন করা হয়েছে, যখন শিথিল করা প্রয়োজন, তখন স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা সাপেক্ষে শিথিল করা হয়েছে। সবদিক বিবেচনা করে সরকার যা কিছু করছে, তা ভেবেচিন্তেই করছে। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারলে করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি দেশ অর্থনৈতিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রেহাই পাবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, আমরা এখনও শঙ্কিত, আমরা যখন দেখি যে বিভিন্ন যানবাহনে, বিশেষ করে রিক্সায়, সিএনজিতে জটলা পাকায় এবং সেখানে অনেক লোক চলাফেরা করে, আমরা যখন দেখি দোকানে জটলা পাকাচ্ছে, আমরা দেখি শিল্পের সামনে, আমরা দেখি ফেরিঘাটে, তখন আমরা আতঙ্কিত হই যে সংক্রমণ তো বৃদ্ধি পাবে। আপনারা লক্ষ্য করছেন, সংক্রমণ কিছুটা হলেও বেড়েছে। যদি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তাহলে এটি বাড়তেই থাকবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপ এবং ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, সুষ্ঠুভাবে হাসপাতালটি তৈরি করার জন্য আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে এটিকে হাসপাতাল করার আমাদের যে উদ্যোগ সেটি প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করেছেন, এজন্য তাকেও ধন্যবাদ জানাই। এটা যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায় এজন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন। এ সময় সবাইকে সবার পাশে থেকে দেশের প্রয়োজনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, যে যেভাবে পারুন বাংলাদেশকে সাহায্য করুন। আমরা যেন করোনামুক্ত থাকতে পারি।