‘জুয়েলারি শিল্প বিকাশে প্রয়োজন সহজ নীতিমালা’ – কালের কণ্ঠ

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘জুয়েলারি শিল্প বিকাশে আমাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। জুয়েলারি শিল্পটাকে যে উচ্চতায় আমরা নিয়ে যেতে চাই, বিশ্ববাজারে নিয়ে যেতে চাই এবং আমাদের দেশীয় বাজার ও বিশাল। কিন্তু এর মধ্যে আমাদের যে কম্পিটিটর সেটাকে নিয়েও আমাদের চিন্তা করতে হবে। যা হচ্ছে ভারত। এ ছাড়া চোরাচালান তথা অন্যান্য বিষয় বাদই দিলাম। চোরাচালানও একটি ঘোষণা ছাড়া ব্যবসা। যখন মানুষ বৈধ পথে না আনতে পারে তখন অবৈধ পথ খুঁজে বেড়ায়। এই শিল্পটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দেশে সোনার র ম্যাটেরিয়াল নেই। যে কারণে মাঝে মাঝে এর সংকট সৃষ্টি হয়। আমাদের এখানে যে ম্যাটেরিয়াল প্রয়োজন হয় সেটা যদি আমরা এখানে এনে পরিশোধন করে, সেটা আমরা ব্র্যান্ড এবং কোয়ালিটি মেইনটেইন করে বাজারজাত করতে পারি এটা প্রথম কাজ। তারপর সরকারের স্বার্থ তো আছেই। ট্যাক্স ভ্যাট ইত্যাদি। আমরা যদি এই শিল্পটাকে তাদের (ভারত) পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি তাহলে তাদের চেয়ে কম দামে মার্কেট করতে পারব। এটা অত্যন্ত সূক্ষ্ম শিল্প। এ জন্য একটি কম্প্যাক্ট এরিয়া দরকার। এবং এটা অবশ্যই সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। সেই নীতিমালাটা আমাদের তৈরি করতে হবে। ৩০০ ফিটের এদিকে করাও সম্ভব। এটা কোনো ব্যাপার না, যদি বসুন্ধরা জোগাড় করে দেয়, আমরা সেখানে করতে পারব। সবাই মিলে একটা নীতিমালা করতে হবে। এটা একটা সুন্দর সম্ভাবনার ক্ষেত্র।’
তিনি বলেন, ‘এই সেক্টরে (জুয়েলারি খাতে) ৩৪ লক্ষ লোক যুক্ত হয়ে আছে। সরকারের সহযোগিতা যদি ঠিকভাবে পাই, উনারা যদি আমাদের উৎসাহ দেন তাহলে এটা হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ইন্ডাস্ট্রি। সবাই মনে করে না জানি কত টাকা লাগে, কিন্তু জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রিতে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও শুরু করা যেতে পারে। আমরা যে ফ্যাক্টরি তৈরি করছি, সেটাতে আপাতত ছয় হাজার লোক কাজ করবে। কিন্তু আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সেখানে ৩০ হাজার লোক কাজ করতে পারবে। আমরা যদি ছয় হাজার দিয়ে শুরু করে ৩০ হাজারে যেতে পারি তাহলে ৬০ জন লোক দিয়ে শুরু করে ৬০০ জনে যাওয়া সম্ভব।’
উপস্থিত শিল্পমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘উনি এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনসহ এটা-ওটা করে দিয়েছেন। আমাদের এই শিল্পের জন্য একটি নিরাপদ জায়গা দরকার। আমাদের কাছে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ লোক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তারা বলেন একটা নিরাপদ জায়গা দেন, বসুন্ধরার ভিতরে। কিন্তু বসুন্ধরার ভিতর তো ইন্ডাস্ট্রি করা যাবে না। মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করব ঢাকা মেট্রোপলিটনের আশপাশে একটা জায়গা দেওয়ার জন্য। তিন হাজার বিঘা বা এক হাজার একর জায়গা চাইব। আপনারা যদি আমাদের জায়গা দেন তাহলে দেখবেন এখান থেকে রপ্তানি করা যাবে। এবং এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে সবাইকে ১০ বছরের জন্য ট্যাক্স ফ্রি দেওয়া হয়। সেই সুবিধা যদি আমাদের দেওয়া হয় তাহলে সব কিছু (জুয়েলারি শিল্পের) বৈধ পথে চলে আসবে। আমাদের আইন যদি সংস্কার না করি, তাহলে কোনো দিনই বাংলাদেশে চোরাচালান বন্ধ হবে না। যে যত বড় বড় কথাই বলি না কেন। আইন শিথিল করেন, ট্যাক্স শিথিল করেন, সব কিছু সোজা হয়ে যাবে। গার্মেন্টে ভ্যালু অ্যাডিশন বেশি নাই, সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৭ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন হয়। কিন্তু জুয়েলারিতে ৫০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করা সম্ভব। এটাতে যদি একটি মনোযোগ দেন। আমাদের ডিজাইনের কোনো অভাব নেই। চারুকলাতে ছেলেমেয়েরা দেখার মতো কাজ করে। এত সুন্দর, নিখুঁত নিখুঁত কাজ করে। কিন্তু আমরা তাদের উৎসাহ দিই না। দেশীয় লোকজনকে কাজে লাগান।’
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা রপ্তানির ৮৩ শতাংশ গার্মেন্ট রপ্তানি করি। বাকি সব পণ্য মিলিয়ে ১৭ শতাংশ। ২০৪১ সালের মধ্যে ৩০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করার যে টার্গেট, সেটা শুধু গার্মেন্ট টেক্সটাইল দিয়ে সম্ভব হবে না। জুয়েলারি শিল্পটা বিশাল বড় সম্ভাবনাময় জায়গা। সেখানে আমরা কাজ করতে পারি। নীতিমালা হয়েছে। চোরাকারবারিসহ বিভিন্নভাবে স্বর্ণ দেশে আসছে। কাঁচামাল আমদানি করা হলে, সেটা থাকবে না, বন্ধ হয়ে যাবে। এটা একটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য সবচেয়ে বড় দরকার।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক বড় মার্কেট। প্রায় ১৭ কোটি লোকের যে মার্কেট এটা কিন্তু অনেক বড়। এই খাতের উন্নয়নের জন্য যত ধরনের পলিসি সাপোর্ট দরকার, আমি আহ্বান জানাব সরকারের কাছে, সব ধরনের সহায়তা দিতে হবে। এ জন্য যে এখানে প্রচুর কর্মসংস্থান ও ভ্যালু অ্যাডিশনের সুযোগ আছে। আমাদের ওয়ার্ক ফোর্স আছে, স্কিল আছে, তাহলে এটাকে আমরা কেন ব্যবহার করব না? আমি অনুরোধ করব নীতিনির্ধারক যারা আছেন তাদের প্রতি, এটাকে বিভিন্ন ক্লাস্টারে নিয়ে আসার জন্য। কারণ ইন্ডাস্ট্রিগুলো ছোট ছোট বাসাবাড়িতে।’
বাজুসের সাবেক সভাপতি ড. দিলিপ কুমার রায় বলেন, ‘জুয়েলারি শিল্পটা দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি যুগোপযোগী নীতিমালা দিয়েছেন। সেই স্বর্ণ নীতিমালা বাস্তবায়নে আমরা আশা এবং ভরসা পেয়েছে বাজুসের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের প্রতি। আমাদের ব্যবসায়ীদের আর বিদেশমুখী হতে হবে না। বসুন্ধরা একটি গোল্ড রিফাইনারি ফ্যাক্টরি স্থাপন করেছে। এই ফ্যাক্টরি যত তাড়াতাড়ি চালু হবে তত দ্রুত আমরা যে কলঙ্কের টিকা নিয়ে আছি, যে জুয়েলারি ব্যবসা মানে চোরাকারবারি, বৈধতা নাই, এগুলো দূর হবে।’