বসুন্ধরা কিংসের মাঠে দর্শকের ঢল

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ ঘিরে ফুটবল-জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল নীলফামারী। ২০ হাজার ধারণক্ষমতার শেখ কামাল স্টেডিয়ামে কাল তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বাঁশি, ঢোল, ভুভুজেলা বাজিয়ে দর্শকরা প্রাণ খুলে সমর্থন দিয়ে গেছেন স্বাগতিকদের। কিন্তু শেষটা হয়েছে হতাশায়। বাংলাদেশের ১-০ গোলের হারে নীরবতা নিয়েই তাঁরা মাঠ ছেড়েছেন।
এই স্টেডিয়াম আগামী প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে হোম ভেন্যু হচ্ছে বসুন্ধরা কিংসের। তাতে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফল যা-ই হোক, দর্শক উন্মাদনা প্রিমিয়ারের নতুন ক্লাবটিকে দারুণ কিছুরই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ম্যাচ উপভোগ করতে কালই হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে নীলফামারী এসে পৌঁছান কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম। খেলা শেষে দুই দলের ফুটবলাররাই মাঠের দর্শক উপস্থিতি নিয়ে নিজেদের মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন। কাল সকাল থেকেই তীব্র রোদ উপেক্ষা করে স্টেডিয়ামে ঢোকার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যান। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় কোনো রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই স্টেডিয়ামে ঢুকে খেলা উপভোগ করতে পেরেছেন সবাই। টিকিট না পাওয়া অনেকেই ছিলেন স্টেডিয়ামের বাইরে। কাল সারা দিনই তাই স্টেডিয়াম এলাকা ছিল লোকারণ্য। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার এই প্রীতি ম্যাচ দেখতে শিশু থেকে বৃদ্ধ, মহিলা কারোরই আগ্রহের কমতি ছিল না। মহিলাদের জন্য ছিল আলাদা গ্যালারি।
ম্যাচ উপভোগ করতে এসেছিলেন নীলফামারী জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের ডোমার উপজেলার মির্জাগঞ্জ গ্রামের ফজলুল হক (৫০)। জীবনে সরাসরি একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ উপভোগ করে তৃপ্ত তিনি, ‘ইতিহাসের সাক্ষী হলাম আমি। জীবনে প্রথমবারের মতো নিজের অঞ্চলে আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ দেখার অভিজ্ঞতা হলো। দারুণ আনন্দ পেয়েছি। জানি না আবার কবে এমন সৌভাগ্য হবে।’ জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রামের কলেজ পড়ুয়া বদরুল আলম (২০) উচ্ছ্বসিত, ‘আন্তর্জাতিক খেলাগুলো এত দিন টেলিভিশনেই দেখেছি। কখনো ভাবতে পারেনি বাড়ির পাশেই এমন একটি ম্যাচ উপভোগ করতে পারব। আজ আমার একটা স্বপ্ন পূরণ হলো বলতে পারেন।’ উৎসবমুখর পরিবেশে নীলফামারীতে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচের সাক্ষী হতে পেরে এই গর্ব অনেকেরই। ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া ছোট্ট অদিতি রায় ঊর্মি বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছে খেলা দেখতে। তার কাছেও অক্ষয় স্মৃতি হয়ে থাকল এই ম্যাচ, ‘এই ম্যাচের কথা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। এত আনন্দ আর কোনোদিন করিনি। বাবা, মা আর বোনের সঙ্গে খেলা দেখেছি। যদিও শ্রীলঙ্কা ১ গোল দিয়ে দেওয়ার পর মন খারাপ হয়েছিল।’
আসন সীমাবদ্ধতার কারণে নিজ জেলার স্টেডিয়ামে খেলা হলেও সরাসরি দেখতে না পারার আক্ষেপও অনেকের। নীলফামারীরই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক যেমন বলছিলেন, ‘শহরে এসছিলাম খেলা দেখার জন্য। কিন্তু টিকিট না পেয়ে মাঠে ঢুকতে পারলাম না। যদিও ম্যাচটি মিস করিনি। বাংলাদেশ টেলিভিশনকে ধন্যবাদ অন্তত টিভিতে আমাদের খেলাটি দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।’ সেই সৌভাগ্য হয়েছে দেশের আর সব মানুষেরও। টিভিতে ম্যাচ দেখার পাশাপাশিই তারা দেখেছেন নীলফামারীর মানুষের ফুটবল উন্মাদনা। আগামী প্রিমিয়ার লিগে বসুন্ধরা কিংস যখন এখানে দেশসেরা ক্লাবগুলোর বিপক্ষে খেলবে তখনো এমন উন্মাদনা দেখার আশাতেই সবাই। কিংসও প্রিমিয়ারে নাম লিখিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই দল গড়েছে। এই অঞ্চলের দর্শকরাও সেই মিশনে তাদের জন্য হতে পারে বড় শক্তি।
ক্লাব ফুটবলের সেই লড়াইয়ের আগে কাল এই মাঠে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচটির উদ্বোধন করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও নীলফামারী জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি এমন একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের সফল আয়োজনের জন্য। ম্যাচের কয়েক দিন আগে থেকেই রংপুর ও নীলফামারীতে উৎসব উৎসব রব পড়ে যায়। সৈয়দপুর বিমানবন্দরে খেলোয়াড়দের অভ্যর্থনা জানানো থেকে শুরু করে, টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি তারপর কাল মাঠের এই উপস্থিতিই আসলে পুরো আয়োজনটিকে সফলতা দিয়েছে।