বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের মহানুভবতায় কৃত্রিম ‘পা’ পাচ্ছে সোনিয়া

দুই বছর বয়সে ট্রেনে কাটা পড়ে সোনিয়া খাতুনের এক পা। ডান পায়ের উরু থেকে কেটে পড়ে যায়। এরপর এক পায়ে হেঁটে কলেজে যায় সোনিয়া খাতুন। তবে এখন আর এক পায়ে সোনিয়া কলেজে যাবে না। তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পোগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। কৃত্রিম পা লাগাতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের মহানুভবতায় সোনিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ। মঙ্গলবার সকালে সোনিয়ার পরিবারকে দেওয়া হয় এক লাখ টাকা ও ঈদের উপহার সামগ্রী।
নগরীর হাদির মোড় এলাকার বস্তিতে বসবাসকারী সোনিয়ার পরিবারের হাতে নগদ টাকা ও উপহার সামগ্রী তুলে দেন বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের বিভাগীয় সেলস ইনচার্জ তোফাজ্জল ভূইয়া। এসময় উপস্থিত ছিলেন আবরার শাহরিয়ার, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সোনিয়া এখন উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে পড়ে। এই ফাঁকে একটি চাকরির আশায় তিন মাস আগে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিল রাজশাহী শহরে। থাকা-খাওয়ার খরচের জন্য তার মা একটি হোটেলে কাজ নিয়েছিলেন। চাকরিতে যোগদানের ঠিক পাঁচদিন আগে করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। মা-মেয়ে আটকা পড়েন রাজশাহী শহরে। থাকেন বস্তির একটা বাসায়।
সোনিয়া খাতুনের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার পূর্ব ধোপাপাড়া গ্রামে। তার বাবা মজিবুর রহমান মানসিক প্রতিবন্ধী। মা রহিমা বেগম গ্রামের মানুষের বাড়িতে একবেলা ঝিয়ের কাজ করতেন। আরেক বেলা মাঠে কাজ করতেন। সোনিয়া ধোপাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছে। বাড়ি থেকে তাকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে হতো। এনিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তা নজরে আসে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের। কৃত্রিম পা লাগাতে সোনিয়ার এক লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল। সেটি তুলে দেওয়া হয় সোনিয়ার পরিবারের হাতে।
সোনিয়ার মা রোহিমা বেগম জানান, এর আগে একবার কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছিল। মেয়েটি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কৃত্রিম পাটি খাটো হয়ে যায়। পরে একটু বড় করে নেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে এটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ব্র্যাক এ ধরনের নতুন পা তৈরির জন্য এক লাখ টাকা খরচের কথা বলেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে এমন সহায়তা পাওয়ায় তিনি বাকরুব্ধ। তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানকে আল্লাহ যেনো সুস্থ রাখেন, দীর্ঘজীবন দান করেন।’
নতুন কৃত্রিম পায়ের জন্য টাকা পেয়ে খুশি সোনিয়া খাতুন নিজেও। সোনিয়া বলেন, ‘এতো তাড়াতাড়ি টাকাটা পাওয়া যাবে আশা করিনি। এখন আমাকে আর এক পায়ে কষ্ট করে স্কুলে যেতে হবে না। বসুন্ধরা গ্রুপের এই অবদানের কথা আমার সারাজীবন মনে থাকবে।’
আর্থিক অনুদান তুলে দেওয়ার পর বসুন্ধরা গ্রুপের রাজশাহী ডিভিশনের সেলস ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন ভুঁইয়া বলেন, পত্রিকার পাতায় সোনিয়া খাতুনে জীবন চলার নির্মমতা চোখে পড়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের। পরে তার নির্দেশে মহানগরীর হাদিরমোড় এলাকার বস্তিতে গিয়ে তারা সোনিয়া খাতুনের হাতে অর্থিক অনুদান তুলে দিলেন। এ সময় রমজান ও ঈদের উপহার হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের উৎপাদিত বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেটও তুলে দেওয়া হয়েছে।