বসুন্ধরা টেকনিক্যাল শিক্ষার্থীদের প্রকল্প, গাড়ি চলবে সিগন্যাল ছাড়া

শাঁই শাঁই করে গাড়ি চলে যাচ্ছে, কোথাও থামতে হচ্ছে না। একদল তরুণ এ রকম এক স্বপ্ন সামনে রেখে তাদের পরিকল্পনা সাজিয়েছে। যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে সত্যিই গাড়ি চলবে অবাধে। যেখানে কোনো সিগন্যাল থাকবে না। থাকবে শুধু ছুটে চলা। ‘সেইভ রোড, সেইভ লাইভ’ নামের প্রকল্পটি করে দেখিয়েছে বসুন্ধরা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীরা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত রিজিওনাল স্কিল কম্পিটিশন-২০১৭-তে বিভিন্ন পলিটেকনিকের ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রজেক্ট পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। সেখানে বসুন্ধরা টেকনিক্যালের ছাত্রছাত্রীরা তিনটি প্রজেক্ট উপস্থাপন করে। বাকি দুটি হলো হাইড্রলিক এসকাভেটর ও ওয়াটার লেভেল ইনডিকেটর। ‘সেইভ রোড, সেইভ লাইভ’-এর মতো ওয়াটার লেভেল ইনডিকেটরটিও একটি যুগোপযোগী প্রকল্প পরিকল্পনা। এটা এমন একটা অটোমেটিক সিস্টেম, যেখানে কারো ট্যাংকে নির্দিষ্ট লেভেলের নিচে পানির স্তর নামার পরপরই পানি উত্তোলনের পাম্প চালু হয়ে যাবে। আবার ট্যাংক পূর্ণ হয়ে গেলে অটোমেটিক্যালি সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। সকালে প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি এ কে এম এ হামিদ এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক মো. অহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কোর্স অ্যাক্রিডিটেশন বিশেষজ্ঞ ড. মো. শাহ আলম মজুমদার।
শাহ আলম মজুমদার তাঁর উপস্থাপনায় দক্ষ মানবসম্পদের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিল্পের ক্ষেত্রে বর্তমানে মালয়েশিয়ার চারজন মানুষ যে পরিমাণ কাজ করতে পারে, সেটা করতে প্রয়োজন হয় বাংলাদেশের ১০০ জন লোকের। কৃষিখাতে অস্ট্রেলিয়ার আটজন মানুষ যে করতে পারে, সেটা করতেও বাংলাদেশের ১০০ জন লোকের প্রয়োজন পড়ে। আবার থাইল্যান্ডে সেবা প্রদানে ২৩ জন মানুষ যে কাজ করছে, সেটা করতেও বাংলাদেশের প্রয়োজন ১০০ জন মানুষ। সুতরাং দক্ষ মানুষের কত অভাব সেটা সহজেই অনুমেয়। দেশ যতটা ডিজিটাল হবে ঠিক ততটাই বেশি পরিমাণে দক্ষ লোকের প্রয়োজন পড়বে বলে জানান তিনি। তা না হলে দেশের ডিজিটাল অবস্থার খুব বেশি উন্নয়ন ঘটবে না। আইটি খাতের জন্য দক্ষ লোক তৈরির কোনো বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।
প্রদর্শনীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ১৯টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সেইভ দ্য লাইফ, ডিজিটাল হেলথ সেফটি রোবট, তুষের ছাই থেকে সিরামিক পণ্য, কচুর চিপস, স্মার্ট বাস, ডিটেকটিভ সাবমেরিন, জলে ও স্থলে চলার একই সাইকেল, স্মার্ট এসকেলেটর, রোটিং ব্রিজ, গৃহস্থালির বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, হোম বেইজড অটোমেশনসহ আরো অনেক কিছু।
আহসানউল্লাহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ডিজাইন করেছে স্মার্ট বাসের। এই বাস একটা প্রোগ্রামে নিয়ন্ত্রিত হয়ে চলতে থাকবে একটি নির্দিষ্ট লেনে। যেখানে যেখানে যাত্রী ওঠানামা করা দরকার, সেখানে বাস অটো থামবে। যাত্রীদের নামা বা ওঠা শেষ হলে বাসের গেট অটোমেটিক্যালি বন্ধ হবে এবং চলতে থাকবে। বাসের সামনে কোনো বাধা থাকলে সেটা অটো সেন্সরের মাধ্যমে সংকেত নিয়ে বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া গাজীপুরের মডেল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল হেলথ রোবটের প্রজেক্ট দাঁড় করিয়েছে। যে রোবট মানুষের শরীরে পুষ্টির বিষয়গুলো নিয়ে অটো সিগন্যাল দিবে। কখন কোন ধরনের খাবার গ্রহণ করা যায় তার পরামর্শ দেবে। আবার খাবারগুলো কতটা মানসম্মত সেটারও জানান দেবে। বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকসের ছাত্ররা তুষের ছাই থেকে বিভিন্ন সিরামিক পণ্য তৈরির প্রকল্প প্রদর্শন করে। এই ছাই থেকে কিভাবে বিভিন্ন ধরনের টাইলস ও সিরামিক পণ্য তৈরি করা যায় তার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তারা। দেশের প্রযুক্তি ব্যবহার করেই একটি ডিটেকটিভ সাবমেরিন বানানো সম্ভব। এই ধারণা তুলে ধরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা। কিভাবে স্বল্প খরচে এই সাবমেরিন বানানো এবং সমুদ্রসীমায় কাজে লাগানো যায় সেটা তুলে ধরে তারা।