বসুন্ধরা পেপার মিলসের আইপিও শিগগিরই

চলতি বছর পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) কম হলেও অর্থ উত্তোলন থেমে নেই বলে জানালেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন। তিনি বলেন, বন্ড ও কম্পানির রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ চলছে। বেশি আইপিও অনুমোদন দিলে মার্কেট মেকার থেকে শুরু করে তারল্যসংকট বলে সমালোচনা করে। ভালো কম্পানিও কম এসেছে এমন সমালোচনা শুনতে হয়, যার জন্যই সব কিছু বিবেচনা করে আইপিও অনুমোদন দিতে হয়। বিডিং সম্পন্ন হওয়া বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেডকে শিগগিরই অনুমোদন দেওয়া হবে।
গতকাল বুধবার গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে ‘দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজারের ভূমিকা : বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। সংগঠনটির সভাপতি ছায়েদুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরী, ইফাদ অটোসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন আহমেদ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সিইও আহসান খান চৌধুরী, খান ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফায়েল কবীর খান প্রমুখ।
দেশের অন্যতম ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড। কম্পানিটি শেয়ারের দাম নির্ধারণে ইলেকট্রনিক বিডিংয়ের অনুমোদন পায় গত ২৭ আগস্ট। ১৬-১৯ অক্টোবর পর্যন্ত যোগ্য বিনিয়োগকারীর দাম প্রস্তাবে কাট অফ প্রাইস নির্ধারিত হয় ৮০ টাকা, যা এখন কমিশন চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। আর এর পরই চাঁদা গ্রহণ করবে কম্পানিটি।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে অর্থ উত্তোলনের বড় উৎস পুঁজিবাজার। তবে আমাদের দেশের শিল্পায়ন এখনো ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল। এতে ব্যাংকের ওপর অত্যধিক চাপে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের পুঁজিবাজারকে গতিশীল ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত কম্পানিকেও পুঁজিবাজারে আনতেই হবে। বহুজাতিক কম্পানিকে বাজারে আনতে জোর উদ্যোগ নিতে হবে। আর কর রেয়াতের ক্ষেত্রেও ছাড় দিতে হবে।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, সরকারি বিভিন্ন কম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যেসব সরকারি কম্পানি বাজার আছে, সেগুলোও ভালো করছে। ব্যাংকের ঋণে শিল্পায়ন হলে ঝুঁকি বাড়ে, শেয়ারবাজার থেকে অর্থায়নের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমে। তবে বাংলাদেশে শিল্পায়ন এখনো ব্যাংকনির্ভর। ফলে ব্যাংকের ঝুঁকি বাড়ছে। তবে এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শেয়ারবাজার থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে শিল্পায়ন করতে হবে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, দেশে শিল্পায়ন বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে। আর দিন-রাত পরিশ্রম করে এ কাজ করছে শিল্প উদ্যোক্তারা। এই উদ্যোগ সহজ করতে টাকা দিতে প্রস্তুত পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারে আসতে ইচ্ছুক কম্পানির যোগ্যতা অনুযায়ী দাম নির্ধারণে পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধন করা হয়েছে। এই রুলসে প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে কম্পানিগুলোর জন্য বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সম্প্রতি বুক বিল্ডিং পদ্ধতির অপব্যবহার হচ্ছে। বুক বিল্ডিং নিয়ে অপব্যবহার রোধে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘৯০ দিনের মধ্যেই আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হবে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ভালো কম্পানি যাচাই করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য আনতে হবে। তাদের অডিট রিপোর্ট ঠিক করে অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হবে। অন্যদিকে খারাপ কম্পানি নিয়ে বসে, আলোচনা করে সমস্যার সামাধান করতে হবে। এর পরই আবেদন করতে হবে। ভারতে বহুজাতিক কম্পানিগুলো বেশির ভাগই পুঁজিবাজারে লিস্টেড।’ আমাদের দেশের ইউনিলিভারসহ বহুজাতিক কম্পানিগুলোর সমস্যা সামাধান করে বাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করার অনুরোধ জানান তিনি।
ছায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পুঁজিবাজারসংক্রান্ত সরকারি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীন সিদ্ধান্তে। এর ফলে সময়ে সময়ে বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পুঁজিবাজারের স্বার্থে বাজারসংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে এর পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘বহুজাতিক কম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে বাধ্যতামূলক আইন করা দরকার। ভারতসহ বেশির ভাগ দেশের বাধ্যতামূলক আইন রয়েছে। এরা দেশে ব্যবসা করে বিদেশে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। বহুজাতিক কম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আর বহুজাতিক কম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতে বিদ্যমান ১০ শতাংশ কর রেয়াতের পরিবর্তে ২০ শতাংশ করতে হবে।’