মাশরাফি মানেই নিশ্চিত শিরোপা!

বছর গড়ায়, নিয়ম পাল্টায়, বদলে যায় দল; জার্সির রং, পেছনের সংখ্যা। বদলায় না কেবল মাশরাফি বিন মর্তুজার বিপিএল ভাগ্য। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ নামের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টটা প্রতিবছর হবে, অনেক উৎসাহী দলের মালিক দেশি-বিদেশি অনেক ক্রিকেটারকে নিয়ে দল গড়বেন। কিন্তু আসর শেষে শিরোপা জিতবে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে খেলা দলটাই। ২০১৫ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে শিরোপা জেতাতে না পারার ব্যতিক্রমটা যে প্রতিষ্ঠা করে সেই নিয়মকেই!
গত মৌসুমে রংপুর রাইডার্স ছিল নানা বিতর্কে জেরবার এক দল। মালিকানা বদল হলো, এবার কর্ণধার বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান। টি-টোয়েন্টির সেরা ক্রিকেটার ক্রিস গেইল আর বিপিএলের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে দলভুক্ত করাটাই ছিল মাস্টারস্টোক। গ্রুপ পর্বে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগোলেও কোণঠাসা অবস্থা থেকেই জয়ের লড়াইয়ে মরিয়া প্রচেষ্টা রংপুর রাইডার্সের। ফল, চতুর্থ দল হিসেবে শেষ চারে জায়গা করে নেওয়া দলটার অধিনায়কের হাতেই বিপিএলের পঞ্চম আসরের শিরোপা! সংবাদ সম্মেলনে অনেকেই মাশরাফির কাছে জানতে চাইলেন সাফল্যের রহস্যটা। মিষ্টি হেসে কোনো রহস্য নেই বললেও পরে ভেঙে বলেছেন, ‘আমরা দলটাতে খুব বেশি অদল-বদল করিনি। চতুর্থ দল হিসেবে শেষ চারে খেলার অসুবিধা হচ্ছে দুটো সেমিফাইনাল খেলতে হয়। সুবিধাটা হচ্ছে—সবাই অনেক অনুপ্রাণিত থাকে। আমরাও চেয়েছিলাম, মনে কোনো দ্বিধা না নিয়ে প্রত্যেকেই নিজের সেরাটা দিতে। সঙ্গে কিছুটা ভাগ্য। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি। তার সঙ্গে পরিশ্রমও দরকার।’
অন্য অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি যেখানে তারার হাট, সেখানে ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের আগমনের আগ পর্যন্ত রংপুর রাইডার্স ছিল বিবর্ণ। রবি বোপারা, মোহাম্মদ মিঠুনরা রান করলেও মেটাতে পারছিলেন না টি-টোয়েন্টির দাবি। গেইলও দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংস খেলে যখন সমর্থকদের মনে দ্বিধা জাগিয়ে ‘ফুরিয়ে গেছেন’ জাতীয় আলোচনার জন্ম দিয়েছেন, তখনই এলিমিনেটর ও ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটো ম্যাচে অমন তাণ্ডব! মাশরাফি নিজেও অতটা ভাবেননি, ‘সঠিক সময়ে জ্বলে ওঠাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে ও এতটা ভালো করবে সেটা আমিও ভাবিনি।’ ড্রেসিংরুমে থেকে গেইলের এমন ইনিংস উপভোগ করার অভিজ্ঞতাটাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করলেন মাশরাফি, ‘গেইলের ব্যাটিং দেখতে মজাও লাগে আবার ভয়ও লাগে, মনে হয় এই বুঝি আউট হয়ে গেল। তবে ও এখন অনেক পরিণত ব্যাটিং করে, শুরুতে একটু সময় নেয়। আমার সৌভাগ্য যে আমি একই ড্রেসিংরুমে বসে গেইলের তিনটা সেঞ্চুরি দেখেছি।’
বিপিএলে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসে গেইল ও মাশরাফি ছিলেন সতীর্থ। এরপর এক হলেন এই রংপুর রাইডার্সের তাঁবুতে। দুজনের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের রসায়নটা স্পষ্ট হয়ে গেল সংবাদ সম্মেলনে দুজনের কথাতেই। মাশরাফির অধিনায়কত্ব নিয়ে গেইল বলে গেলেন, ‘ম্যাশ খুব বড় মাপের নেতা। খুবই অভিজ্ঞ, ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। কখনো কখনো সে খুব মজা করে কথা বলে, যাতে সবাই হাশি-খুশি ও নির্ভার থাকে। মাশরাফির নেতৃত্বে খেলতে সব সময়ই ভালো লাগে। সে শেষের আগ পর্যন্ত কখনো হাল ছাড়ে না। সে অন্যদের কথাও মন দিয়ে শোনে। আমাকেও খুব শ্রদ্ধা করে।’ খানিক বাদেই একই চেয়ারে বসে গেইল সম্পর্কে মাশরাফির বিশ্লেষণ, ‘ও একজনই। দলে আমি যদি মাত্র একজন খেলোয়াড়কে চাই, সেটা গেইলকেই চাইব। ও যেদিন খেলে, সেদিন প্রতিপক্ষের সাত-আটজনও ওর সামনে কিছু না।’
অথচ প্রতিপক্ষের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টিতে বিদেশি লিগগুলোতে নিয়মিত খেলা একমাত্র বাংলাদেশি ক্রিকেটার যেন আড়ালই খুঁজলেন সতীর্থদের ভিড়ে। সাকিব নিজে গেইলের ক্যাচ ফেলেছেন, পারতপক্ষে গেইলকে বল করতে চাননি। ম্যাচের পর বললেন, ‘ও বাঁহাতি সিপনারদের বল খুব ভালো খেলে। গেইল আউট হলে আমি অবশ্যই বল করতাম। গেইল যতক্ষণ ছিল ওই সময় আমার বল করা কঠিন। শেষ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে কারণ ওটা তো করতেই হতো।’ ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বললেন নিজের ক্যাচ ফেলাটাই।