মাশরাফি যেখানে ট্রফি সেখানে

আরও একটি বিপিএল ফাইনালের সমাপ্তি। আরও একটি শিরোপা বিতরণ অনুষ্ঠান চলছে। বিজয়ী দলের অধিনায়ককে মঞ্চে ডেকে নিলেন সঞ্চালক, আরও একবার। ক্রিকেটের নিয়মিত দর্শক হয়ে থাকলে, বিপিএলের গত আসরকে নিছক ‘দুর্ঘটনা’ বলে মেনে নিলে, ঘটনার পরবর্তী অংশটা নিশ্চিতভাবেই আপনার কাছে খুব পরিচিত। আরও একবার বিপিএল শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে যিনি এগিয়ে এলেন, বিপিএলের আগের চার আসরের তিনটিতে তার হাতেই শেষ আশ্রয় পেয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট টুর্নামেন্টের ওই শিরোপা। গতকাল, আরও একবার সেই শিরোপা হাতে নিয়ে রংপুর রাইডার্সের সতীর্থদের সঙ্গে আনন্দে মাতলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া বিপিএলে সময়ের পরিক্রমায় বদল এসেছে অনেক। আয়োজনের ব্যাপ্তি বেড়েছে, বেড়েছে টুর্নামেন্টের রোশনাই। মাশরাফিই কি কম বদলের মধ্য দিয়ে গেছেন? শুরুটা করেছিলেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস দলের হয়ে। এরপর গায়ে চাপিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জার্সি। সেই দু’দলেই দুই বছর করে কাটানোর পর এবার মাশরাফির ঠিকানা হয়েছিল রংপুর রাইডার্সের শিবির। কিন্তু একটা ব্যাপার রয়ে গেছে প্রায় একই রকম- মাশরাফির হাতে বিপিএল শিরোপা। ‘প্রায়’ শব্দটা ব্যবহার করতে হচ্ছে কারণ, গত আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে শিরোপা জিততে পারেননি মাশরাফি। সেই ‘বিচ্ছেদ’টুকু বাদ দিলে মাশরাফি আর বিপিএল শিরোপা যেন দারুণ এক জুটি।
গতকাল সেই জুটির পুনর্মিলনের দিনটায় সংবাদ সম্মেলন কক্ষে আবারও পরিচিত এক আবহ। বিপিএলের ফাইনাল শেষ, কথা বলতে এলেন চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। শুরুতেই জানতে চাওয়া হলো, বিপিএলে তার এই সাফল্যের রহস্য।
মাশরাফি স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই উত্তরটা দিলেন। নিজেকে কৃতিত্ব দিতে বরাবরই তার অনীহা। কৃতিত্ব দিলেন নিজের ভাগ্যকে। বললেন, ‘কোনো রহস্য নেই। ভাগ্য সাহায্য করেছে। ভাগ্য সাহায্য না করলে কিছুই সম্ভব নয়। আগেরবার যেমন সেমিফাইনালেই উঠতে পারিনি। এবার পেরেছি, কারণ ভাগ্য সঙ্গে ছিল।’
চতুর্থ দল হিসেবে প্লে-অফ নিশ্চিত করা দলকে চ্যাম্পিয়ন বানানোটা কি শুধুই ভাগ্যের ব্যাপার? দলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বা গেমপ্ল্যানের কি কোনো কৃতিত্ব নেই? মাশরাফি খোলাসা করে বললেন সেটাও, ‘অবশ্যই চেষ্টাটাও অনেক বড় একটা ব্যাপার। চেষ্টা না করে শুধু ভাগ্যের ওপর ভরসা করলে কিছুই হয় না। চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে হলে কিংবা ভালো কিছু করতে হলে অবশ্যই ভাগ্যের সাহায্যও গুরুত্বপূর্ণ। লীগ পর্ব পার হওয়ার পর আমাদের চিন্তা ছিল সুযোগটা কাজে লাগানো। দলের সবাই পুরো স্বাধীনতা নিয়ে খেলেছে। কোনো দোষারোপ ছিল না আমাদের মধ্যে। যে যেভাবে খেলতে পছন্দ করেছে, সেভাবেই খেলেছে। এ ব্যাপারগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’ দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, টুর্নামেন্টজুড়ে তিনি নিজেও খেলেছেন চ্যাম্পিয়নের মতো। বিপিএলের ইতিহাসেই তিনি অন্যতম সেরা বোলার। এবার বোলিংয়ের পাশাপাশি ভূমিকা রেখেছেন ব্যাটিং ও ফিল্ডিং দিয়েও। দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন সামনে থেকে। তাই কেবল ভাগ্যের জোরে নয়, নিজের সেরাটা দিয়ে এবং দলের সেরাটা বের করে নিয়েই বিপিএলের শিরোপা হাতে তুলেছেন মাশরাফি। আরও একবার।