‘অভাবে আমার জীবন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। আশাই আমার একমাত্র ভরসা। আমার জীবনে এই আশার প্রদীপ জ্বেলেছে বসুন্ধরা গ্রুপ।’ বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সেলাই প্রশিক্ষণ নিতে এসে কথাগুলো বলছিলেন বাঞ্ছারামপুরের আইয়ুবপুর গ্রামের জামাল উদ্দিনের মেয়ে আকলিমা আক্তার।
অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল আকলিমার। অভাবের কারণে স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে গেছেন। তখন আকলিমার ঠাঁই হয় বাবার বাড়িতে। মা-বাবা, ভাই-বোন মিলে ১০ জনের পরিবারে অভাবের কোনো শেষ নেই।
দিনমজুর বাবার আয়ে তিন বেলার কোনো বেলায়ই খাওয়া হয় না ঠিকমতো। এমন অবস্থায় বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে আকলিমার পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ। শুধু আকলিমাই নন, তাঁর মতো আরো ৫০ অসহায় অসচ্ছল নারীকে স্বাবলম্বী হওয়ার দীক্ষা দিতে বাঞ্ছারামপুরে সম্প্রতি চালু হয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। উপজেলার দুটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ২৫ জন করে ৫০ জন নারী নিয়মিত সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
তাঁদের কেউ বিধবা, কেউ বা স্বামী পরিত্যক্তা আবার কেউ দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী।
আইয়ুবপুরের একটি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন আকলিমা। তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন একজন দিনমজুর। মানুষের জমিতে কাজ করতে পারলেই খাওয়ার পয়সা জোটে। এখন অসুস্থ থাকার কারণে কর্মহীন হয়ে আছেন।
বিভিন্ন মানুষের সাহায্য নিয়ে কোনো রকমে দিনাতিপাত করতেন। এর মধ্যে আবার মেয়েকে ছেড়ে তাঁর স্বামী চলে গেছেন। এমনিতেই ভাত জোটে না, তার ওপর সংসারে আরেকজন মানুষ বোঝা হয়ে দাঁড়ায় জামালের। দিশাহারা জামালের পরিবারে আশার আলো জোগায় বসুন্ধরা শুভসংঘ। উপজেলা শুভসংঘের বন্ধুরা তাঁদের পরিবারের দুর্দশার কথা জেনে আকলিমাকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেন। তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে আকলিমাকে সেলাই মেশিন দেবে বসুন্ধরা গ্রুপ। সেলাই প্রশিক্ষণ নিতে এসে বেশ আত্মবিশ্বাসী আকলিমা বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ ও মেশিনেই ঘুচবে আমার দরিদ্রতা। বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ দুঃসময়ে আমার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’
আরেক প্রশিক্ষণার্থী সায়মা আক্তার। অল্প বয়সে বিধবা হয়ে দুই সন্তান নিয়ে দিশাহারা জীবন কাটাচ্ছিলেন। বড় মেয়েটি প্রতিবন্ধী, ছোটটি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। স্বামী না থাকায় শ্বশুরবাড়িতে ঠাঁই হয়নি। বাবার বাড়িতে চলে আসতে হয়। মা নেই অনেক বছর। বাবাও মারা গেলেন এর মধ্যে। আপনজন বলতে আর কেউ ছিল না। এমন অবস্থায় সায়মার পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ। শুভসংঘের মাধ্যমে তাঁকে নেওয়া হয় বিনা মূল্যের সেলাই প্রশিক্ষণে। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি পাবেন নতুন সেলাই মেশিন। সেই সেলাই মেশিনে স্বপ্ন বুনবেন সায়মা। তাঁর চোখেমুখে ভাসছে স্বপ্ন ছোঁয়ার হাতছানি। প্রশিক্ষণ শেষে কখন সেলাই মেশিন পেয়ে রোজগার করবেন সেই স্বপ্নে বিভোর এখন আকলিমা, সায়মারা। বয়স চল্লিশের কোঠায় ঠেকলেও বিয়ে করেননি দিপালী রানী দাস। তিনিও এসেছেন সেলাই প্রশিক্ষণ নিতে। কয়েক দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে শিখে গেছেন অনেক কিছুই। এখন তাঁর স্বপ্ন সেলাই মেশিন পেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। তিনি বলেন, ‘অসহায় মানুষের কল্যাণে যারা কাজ করে, তাদের চেয়ে ভালো লোক ভগবানের কাছে আর কে আছে? জীবনের শেষ পর্যন্ত নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পথ চলতে চাই। আমার মা-বাবা নেই, সেই দায়িত্ব নিয়েই বসুন্ধরা গ্রুপ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। ভগবান তাদের মঙ্গল করুন।’
আরেকটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র ছয়ফুল্লাকান্দি হাজি নাবালক প্রি-ক্যাডেট একাডেমিতে। এখানকার প্রশিক্ষণার্থীদের একজন শাহ রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী সুমাইয়া। তার বাবা নেই। মেয়ে যখন প্রশিক্ষণ নেয়, মা পাশের রুমে বসে থাকেন। সুমাইয়া বলে, ‘সংসারে মা আর আমি। আমাকেই হাল ধরতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। আমাদের চলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। বসুন্ধরা গ্রুপ আমাকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন দেবে। সেলাই মেশিনের চাকা ঘুরিয়ে আমাদের সংসারের অভাব দূর করব। নিজের পড়ালেখাটাও শেষ করতে চাই। বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ আমার মতো দরিদ্র পরিবারের মেয়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’
অসহায়ত্বের বেড়াজাল ছিন্ন করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় শাহ রাহাত আলী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সিনহা। মা-বাবার বনিবনা হয়নি। মেয়েকে নিয়ে মা চলে আসেন বাপের বাড়ি। সিনহার বাবা আবার বিয়ে করেন। মাকেও অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেন তার নানা। একা হয়ে যায় সিনহার জীবন। থেকেও মা-বাবা হারা হয় মেয়েটি। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কিছু একটা করতে চায় সিনহা। ভর্তি হয় বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এখন সিনহা আর একা নয়। তার সঙ্গে আছে ৫০ জন সহযোদ্ধা, যারা জীবনসংগ্রামে বিজয়ের লক্ষ্যে অবিচল। সিনহা বলে, ‘একদিকে বাবা, অন্যদিকে মা থেকেও নেই। কী যে এক হাহাকার মরুভূমি আমার জীবন! এখন আমার আশার বাতিঘর বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। অন্য অনেককে দেখে আমার দুঃখ ঘুচে গেছে। এখানে এসে দেখি সবাই দুঃখী। তার পরও আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি। প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের যে সেলাই মেশিন দেওয়া হবে, তা হবে আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর হাতিয়ার। আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাবই। বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’
SOURCE : কালের কণ্ঠ২০০ পরিবারের মুখে হাসি ফোটাল বসুন্ধরা শুভসংঘ
Bashundhara Shuvosangho Brings Smiles to Faces of 200 Families
ফেনীতে বন্যা দুর্গতদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ
Bashundhara Shuvosangho Continues Support for Flood Victims in Feni
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বন্যার্তদের মাঝে বসুন্ধরা ফুডের ত্রাণ বিতরণ
Bashundhara Food Distributes Relief Among Flood Victims Under Army Supervision
বন্যার্তদের পাশে বসুন্ধরা গ্রুপ
Bashundhara Group Stands by Flood Victims
বন্যার্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে বসুন্ধরা গ্রুপ
Bashundhara Group Comes Forward to Help Flood Victims