All news

বসুন্ধরা শুভসংঘের মাসব্যাপী ইফতার, ‘দয়া নয় ভালোবাসার দাওয়াত’

ইব্রাহিমপুরে বসুন্ধরা শুভসংঘের মাসব্যাপী ইফতার আয়োজন

রমজান এলেই আমাদের চারপাশ বদলে যায় এক অন্যরকম আবহে। দিনের শেষে সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে মসজিদে ধ্বনিত হয় আজানের সুর, আর সেই সুরের আহ্বানে রোজাদাররা মিলিত হন ইফতারের টেবিলে। কিন্তু সমাজের প্রতিটি মানুষের কি সে সুযোগ হয়?

ইফতারের সময় যখন কেউ বাড়ির খাবার টেবিলে বসে, তখন কোনো রিকশাচালক হয়ত পথে ক্লান্ত শরীরে বিশ্রাম নিচ্ছেন, কোনো পথশিশু হয়ত অন্ধকার গলিতে শুকনো মুখে তাকিয়ে আছে, অথবা কোনো শ্রমজীবী মানুষ হয়ত না খেয়ে পার করছেন দীর্ঘ সময়। এই বাস্তবতাকে বদলানোর স্বপ্ন নিয়েই বসুন্ধরা শুভসংঘ রাজধানীর মিরপুরের ইব্রাহিমপুরে এবার আয়োজন করেছে এক অনন্য মানবিক কার্যক্রম—‘এক মাসব্যাপী ইফতার মাহফিল’।
রাজধানীর মিরপুরের ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ প্রতিদিন বিকেল হলেই পরিণত হয় এক অনন্য মিলনমেলায়। বসুন্ধরা শুভসংঘের স্বেচ্ছাসেবীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন ইফতার প্রস্তুতের কাজে। কেউ খেজুর ও শরবত সাজাচ্ছেন, আবার কেউ ব্যস্ত আছেন আগত রোজাদারদের বসার ব্যবস্থা করতে।

ইফতারের সময় ঘনিয়ে এলে একে একে হাজির হন সুবিধাবঞ্চিত মানুষরা—রিকশাচালক, দিনমজুর, শ্রমিক, পথশিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কিংবা অসহায় নারী-পুরুষ। সময় ঘনিয়ে আসার সাথেই পরিবেশ হয়ে ওঠে আবেগময়। কেউ শরবত এগিয়ে দিচ্ছেন, কেউ খাবারের থালা সারিবদ্ধভাবে সাজাচ্ছেন। সারা দিনের ক্লান্তি যেন হারিয়ে যায় এই পরস্পরের মাঝে। এখানে ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই, নেই কোনো সামাজিক বৈষম্য।

সবাই একসঙ্গে বসে বসুন্ধরা শুভসংঘের উন্মুক্ত ইফতার বৈঠকে একসঙ্গে দোয়া করে ইফতার গ্রহণ করেন।
আজ শুক্রবার পবিত্র রমজানের ষষ্ঠ দিনের উন্মুক্ত ইফতার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয়ের একান্ত সচিব মাসুদুর রহমান মান্না। আরো উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রাফিউল আহমেদ বাপ্পি এবং সৌল জাংশনের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মাহিন। এ সময় মাসুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সব ধরনের শুভ কাজের সাথেই বসুন্ধরা শুভসংঘ কাজ করে যাচ্ছে। সারা দেশেই সংগঠনের কার্যপরিধি চলমান।
আমরা চেষ্টা করছি সমাজের দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে। ইতিমধ্যে বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই মেশিন বিতরণ, বিভিন্ন চরাঞ্চলে স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। তারই অংশ হিসাবে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য মাসব্যাপী ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।’
এক বৃদ্ধ রিকশাচালক অশ্রুশিক্ত চোখে বললেন, ‘এই রকম ইফতারে বসার সুযোগ আমার জীবনে খুব কম এসেছে। এখানে সবাই আমাদের আপন করে নিয়েছে। মনে হচ্ছে, আমি কারও দয়া নয়, ভালোবাসার দাওয়াতে এসেছি।’ বসুন্ধরা শুভসংঘের এই আয়োজন কেবল ইফতার দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি সমাজে এক নতুন বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগ যেন এক দীপশিখা, যা আলো ছড়িয়ে দিয়েছে বহু ক্ষুধার্ত মানুষের হৃদয়ে। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাসব্যাপী ইফতার কার্যক্রমে সার্বিক তত্বাবধানে কাজ করছে ইব্রাহিমপুরের স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ সৌল জাংশন।

SOURCE : কালের কণ্ঠ